প্রথমবারের মতো আসন্ন ফুটবল বিশ্বকাপের মূল পর্বে জায়গা করে নিয়ে ইতিহাস গড়েছে উজবেকিস্তান। ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর এই প্রথমবার বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে উঠেছে দেশটি, আর সেই উপলক্ষে দেশের ফুটবলে বইছে উৎসবের জোয়ার। এই ঐতিহাসিক সাফল্যের পুরস্কার হিসেবে সরকার ৪০ জন খেলোয়াড়, কোচ ও টিম স্টাফকে উপহার দিয়েছে চীনের বিলাসবহুল গাড়ি ব্র্যান্ড BYD-এর গাড়ি।
৫ জুন আবুধাবিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করে ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করে তিমুর কাপাদজের দল। এশিয়ান বাছাইপর্বের শেষ ম্যাচেই এই অর্জন আসে। ওই ড্রয়ের মাধ্যমে গ্রুপ ‘এ’-তে ইরানের পর দ্বিতীয় হয়ে বিশ্বকাপে নাম লেখায় তারা। এর আগে কাতারকে ৩-০ গোলে পরাজিত করেছিল উজবেকরা। গোলরক্ষক উতিকির ইউসুপভ ছিলেন দলের রক্ষণের অন্যতম স্তম্ভ। ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে তার তিনটি দুর্দান্ত সেভ উজবেকিস্তানের স্বপ্ন পূরণে বড় অবদান রাখে।
এই কৃতিত্বের পর দেশে ফেরার পথে তাসখন্দে খেলোয়াড়দের দেওয়া হয় বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা। প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিওয়েভ খেলোয়াড়, কোচ, চিকিৎসক, ভাষ্যকার এমনকি দলের ফটোগ্রাফারকেও সম্মানসূচক পদক ও উপাধিতে ভূষিত করার ঘোষণা দেন। প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এই জয় কেবল একটি ফুটবল ম্যাচের নয়, বরং এটি আমাদের পুরো জাতিকে প্রেরণা জোগাবে। তরুণদের জন্য এটি এক অনন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।’
কোচ কাপাদজে এই বিজয় উৎসর্গ করেছেন দেশের জনগণের প্রতি। এএফসি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এই দীর্ঘ সফর শুধু আমাদের দলীয় প্রয়াস নয়, এটি পুরো উজবেক জাতির সমর্থন ও আশাবাদের ফসল। জনগণের দোয়া, উৎসাহ ও ভালোবাসাই আমাদের এগিয়ে চলার প্রেরণা দিয়েছে। আমাদের খেলোয়াড়রা নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে লড়েছে প্রতিটি ম্যাচে।’ উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে স্রেকো কাতানেচের স্থলাভিষিক্ত হয়ে কোচের দায়িত্ব নেন কাপাদজে। অন্যদিকে, গোল না পাওয়ার হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় আমিরাতকে। তাদের কোচ কসমিন ওলারইউ বলেন, ‘আমরা সুযোগ তৈরি করেও তা কাজে লাগাতে পারিনি, তাই স্বাভাবিকভাবেই আমরা হতাশ। এখন আমাদের সামনে প্লে-অফের চ্যালেঞ্জ রয়েছে।’
এশিয়া অঞ্চল থেকে এখন পর্যন্ত ছয়টি দল বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছে—জাপান, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, জর্ডান ও সর্বশেষ উজবেকিস্তান। অন্যদিকে, কাতার ও আমিরাতকে যেতে হবে পঞ্চম রাউন্ডের প্লে-অফে। সেন্ট্রাল এশিয়ার প্রথম কোনো দেশ হিসেবে বিশ্বকাপে অংশ নিতে যাওয়া উজবেকিস্তান শুধু অংশগ্রহণ করেই থেমে যেতে চায় না, বরং নতুন ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন দেখছে তারা।