নিষেধাজ্ঞা শেষেই ইলিশের ধুন্ধুমার ধরা: এক জেলের জালেই উঠল ৪৩ মণ! সরকার ঘোষিত ৫৮ দিনের ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হতেই সাগরে নেমে অভাবনীয় সাফল্য পেলেন উপকূলের জেলেরা। পটুয়াখালীর কুয়াকাটা উপকূলসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ইউনুস মিয়া নামের এক অভিজ্ঞ জেলের জালে ধরা পড়েছে ৪৩ মণ ওজনের ইলিশ। বহুদিন পর সাগরে এমন বিপুল পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যেন আশীর্বাদের মতোই এসেছে স্থানীয় মৎস্যজীবীদের কাছে।
২০ লাখ টাকার ইলিশ এক রাতেই! এই বিপুল পরিমাণ মাছ বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকালে পটুয়াখালীর আলীপুর মৎস্য বন্দরের ‘আবদুল্লাহ ফিস’ নামক আড়তে নিলামের মাধ্যমে বিক্রি হয় ২০ লাখ ৬২ হাজার টাকায়। জানা গেছে, বুধবার দিবাগত রাতের ঠিক পরপরই গভীর সমুদ্রে প্রথমবার জাল ফেলে এই বিপুল সংখ্যক ইলিশ আহরণ করা হয়। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর এটিই ছিল তাদের প্রথম অভিযান। এক জালের সাফল্যে হাসি ফুটেছে পুরো ট্রলারে। ট্রলারের মাঝি ইউনুস মিয়া জানান, বুধবার রাতেই ১৯ জন জেলে নিয়ে তারা ‘এফবি তামান্না’ নামের ট্রলারটি নিয়ে পায়রাবন্দর সংলগ্ন গভীর সমুদ্রের উদ্দেশে যাত্রা করেন। নিষেধাজ্ঞা শেষে প্রথমবারের মতো জাল ফেলতেই দেখা মেলে বিশাল আকৃতির ইলিশের। ইউনুস বলেন, “অনেক দিন পরে এমন ভাগ্য খুলেছে আমাদের। এক জালেই এত ইলিশ ধরা পড়বে, ভাবতেই পারিনি। আমরা সবাই খুব খুশি।”
ট্রলারের মালিকের স্বস্তির নিশ্বাস। এ বিষয়ে ট্রলারের মালিক ইউসুফ (কোম্পানি) হাওলাদার জানান, “নিষেধাজ্ঞার সময় ট্রলার বসে থাকায় বড় রকমের আর্থিক চাপের মুখে পড়েছিলাম। ধার-দেনা করে ট্রলার চালু করতে হয়েছে। যদি মাছ না পেতাম, তাহলে হয়তো পরিবার চালানোই কঠিন হয়ে যেত। আল্লাহর রহমতে শুরুতেই এত মাছ পেয়ে আমরা অভিভূত। এই সাফল্য আমাদের অনেকটা ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করবে।”সঠিকভাবে নিষেধাজ্ঞা মানার সুফল। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা দৈনিক ‘কালবেলা’কে বলেন, “এ বছর উপকূলের জেলেরা যথাযথভাবে নিষেধাজ্ঞা মেনেছেন। তারই ফলে সাগরে ইলিশের প্রজনন সঠিকভাবে হয়েছে। মাছ এখন বড় হয়েছে, সংখ্যা বেড়েছে এবং গভীর সমুদ্রে প্রচুর পরিমাণে দেখা যাচ্ছে। যার ফলে জেলেদের জালেও তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি ইলিশ ধরা পড়ছে।”
তিনি আরও জানান, “আমরা আশা করছি, সামনের দিনগুলোতে আরও ভালো সাফল্য পাবেন জেলেরা। এতে করে আগের বছরগুলোর ক্ষতি অনেকটাই পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। পাশাপাশি আমাদের মাছ রপ্তানির ক্ষেত্রেও নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলবে।” ইলিশ মৌসুমে আশার আলো। এই সফল অভিযানের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, সরকার ঘোষিত প্রজননকালীন নিষেধাজ্ঞা সঠিকভাবে পালনের মাধ্যমে কীভাবে ইলিশ উৎপাদনে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। এটি কেবল মৎস্যজীবীদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, জাতীয় পর্যায়েও মৎস্য সম্পদ রক্ষা ও উৎপাদন বৃদ্ধির অন্যতম কার্যকর পথ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। জানা গেছে, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, চাঁদপুরসহ উপকূলীয় বিভিন্ন জেলায় জেলেরা এখন আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। তারা মনে করছেন, এই মৌসুমটি যদি এভাবেই চলে, তবে সংসার, ঋণ ও ভবিষ্যতের বিনিয়োগ সবই সামাল দেওয়া সম্ভব হবে।