ভূমি ব্যবস্থাপনাকে সম্পূর্ণ ডিজিটাল এবং স্বয়ংক্রিয় করতে আগামী জুলাই মাস থেকে একটি নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে সরকার। এই উদ্যোগের আওতায়, একজন নাগরিক ঘরে বসেই ভূমি সংশ্লিষ্ট ১৭টি সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। একইসঙ্গে, জমির মালিকানা প্রমাণের জন্য আর একাধিক দলিলের দরকার হবে না—শুধু একটি ‘ভূমি মালিকানা সনদ’ বা সার্টিফিকেট অব ল্যান্ড ওনারশিপ থাকলেই তা প্রমাণস্বরূপ বিবেচিত হবে। ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন’ প্রকল্পটি এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে চালু হতে যাওয়া ১৭টি ডিজিটাল সেবার মধ্যে রয়েছে—ই-মিউটেশন, রিভিউ ও আপিল মামলা ব্যবস্থাপনা, অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর, রেন্ট সার্টিফিকেট মামলা, মিউটেটেড খতিয়ান, ডিজিটাল ল্যান্ড রেকর্ড, মৌজা ম্যাপ সরবরাহ, মিস মামলা ব্যবস্থাপনা, খাসজমি ব্যবস্থাপনা, দেওয়ানি মামলার তথ্য, হাট-বাজার ও জলমহাল ব্যবস্থাপনা, বালু ও চা-বাগান ব্যবস্থাপনা, ভিপি সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা, ভূমি অধিগ্রহণ এবং অভ্যন্তরীণ বাজেট ব্যবস্থাপনা।
এই সকল সেবা ‘ল্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিস ফ্রেমওয়ার্ক’ নামের একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে একটি অভিন্ন কাঠামোয় সংযুক্ত করে আন্তঃপরিচালনযোগ্য একটি ডেটাবেইস তৈরি করা হবে, যা অন্যান্য সরকারি সেবার সঙ্গেও সমন্বিত করা যাবে। এছাড়া, সরকার ‘ভূমি স্মার্ট কার্ড’ চালুর পরিকল্পনাও করছে, যেখানে মালিকের প্রকৃত পরিচয় সংরক্ষিত থাকবে এবং এটি থাকলে জমির মালিকানা প্রমাণে আর প্রচলিত কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে না। ‘ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইন, ২০২৩’-এ এই উদ্যোগের বিধান রাখা হয়েছিল, যদিও তা এখনো পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। ভূমি মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত ক্রয় পরিকল্পনা অনুযায়ী ৯১৫ কোটি ৯০ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন করা হয়েছে। দেশের ৫,২৪৭টি ভূমি অফিসে সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার সরবরাহ করা হবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
সম্প্রতি অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) এমদাদুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রকল্পের ১৬তম সভায় এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্প ও ডিজিটাল জরিপ প্রকল্প উভয়টিই ৩০ জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন শেষ হবে। অতিরিক্ত সচিব এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, “সরকার চারটি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে— অনলাইন মিউটেশন, অনলাইন পরচা, অনলাইন ম্যাপ ও অনলাইন ভূমি সার্টিফিকেট। জুলাই থেকেই এগুলোর পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু হবে। পাশাপাশি অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয়ের কাজও চলমান রয়েছে, যাতে এই উদ্যোগ আরও জনবান্ধব হয়।” সংশ্লিষ্টদের মতে, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে।