স্থানীয় সময় সোমবার (২৩ জুন) বিকেলে হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা দলের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্প্রতি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা এবং তারই প্রেক্ষিতে ওয়াশিংটন-তেহরান উত্তেজনার নতুন মোড় ঘিরেই এই বৈঠককে ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তৈরি হয়েছে তীব্র কৌতূহল ও উদ্বেগ। এই বৈঠকের কথা নিশ্চিত করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা, যারা স্থানীয় মার্কিন গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, সোমবারের বৈঠকটি হবে হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে এবং সেখানে থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, নিরাপত্তা উপদেষ্টা, সিআইএ ও এনএসএ প্রধানসহ উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বৈঠকে মূলত ইরানের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে। উল্লেখযোগ্য যে, ট্রাম্প সম্প্রতি একাধিকবার প্রকাশ্যে বলেছেন—“ইরান যদি এখনো দিক পরিবর্তন না করে, তবে সরকার পরিবর্তনের চিন্তা করাটাও অস্বাভাবিক নয়।” তার এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি সোমবার নেদারল্যান্ডসের হেগে অনুষ্ঠেয় ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য রওনা দেওয়ার কথা ছিল। তবে হঠাৎ করেই সেই সূচি পরিবর্তন করে ট্রাম্প একদিন পর অর্থাৎ মঙ্গলবার সম্মেলনে অংশ নিতে যাবেন বলে নিশ্চিত করেছে হোয়াইট হাউস। বিশ্লেষকদের ধারণা, হঠাৎ করে সূচি পরিবর্তনের কারণ এই নিরাপত্তা বৈঠকের তাৎপর্য ও প্রয়োজনীয়তা। প্রসঙ্গত, গত শনিবার (২১ জুন) যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় একযোগে হামলা চালায়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই এক টেলিভিশন ভাষণে এই হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “আমরা সফলভাবে ফোরদো, নাতাঞ্জ এবং ইস্পাহান পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোতে হামলা চালিয়েছি। এটি ছিল একটি নিখুঁত সামরিক অভিযান।”
এই হামলার পরপরই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তেহরান। ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা এক বিবৃতিতে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা শুধু ইরানের সার্বভৌমত্বের ওপর হস্তক্ষেপ নয়, বরং এটি আন্তর্জাতিক আইনেরও সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বিশেষ করে পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধে গৃহীত ‘নিউক্লিয়ার নন-প্রলিফারেশন ট্রিটি’ (NPT) চুক্তির পরিপন্থী। তেহরান এই হামলাকে ‘জঘন্য অপরাধ’ ও ‘অপমানজনক আগ্রাসন’ বলেও আখ্যায়িত করেছে। বিশ্বজুড়ে এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করেছে। রাশিয়া ও চীন ইতোমধ্যে এই হামলার নিন্দা জানিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা প্রশমনে উভয়পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও বিবৃতি দিয়ে বলেন, “ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের এই বোমাবর্ষণ মধ্যপ্রাচ্যকে সংঘাতের এক বিপজ্জনক মোড়ে ঠেলে দিয়েছে।” তিনি অবিলম্বে কূটনৈতিক সংলাপ পুনরায় শুরুর আহ্বান জানান। অন্যদিকে, বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা ইরানকে সরাসরি পাল্টা পদক্ষেপ নিতে প্ররোচিত করতে পারে। বিশেষ করে হরমুজ প্রণালী—যা দিয়ে বিশ্বে মোট তেলের এক-চতুর্থাংশ পরিবাহিত হয়—তা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে তেহরান। ইতোমধ্যে ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এমনটি ঘটলে, বৈশ্বিক অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং তেলের দাম আকাশচুম্বী হয়ে উঠবে। সব মিলিয়ে, হোয়াইট হাউসের এই বৈঠক শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা কৌশলের দিক নির্ধারণেই নয়, বরং বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।