বাংলাদেশের নারী ফুটবল দলের জন্য ইতিহাস গড়া এক ঘটনা ঘটেছে। প্রথমবারের মতো তারা এএফসি এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছে, যা দেশের ফুটবল ইতিহাসে এক বিরল সাফল্যের পদচিহ্ন। এই গৌরবময় অর্জন সম্ভব হয়েছে কঠোর পরিশ্রম ও দলীয় সামর্থ্যের ফলস্বরূপ। ইতিমধ্যে তিন দিন আগে এই আসরের মূল পর্বে খেলার নিশ্চিতকরণ হওয়ায় উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে পুরো দেশের ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে। শনিবার অনুষ্ঠিত বাছাই পর্বের শেষ ম্যাচে তুর্কমেনিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে, ৭-০ গোলে হারিয়ে বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল তাদের ক্ষমতা ও প্রতিভার প্রমাণ দিয়েছে। এই জয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে তারা এশিয়ান কাপের মূল পর্বে সরাসরি খেলবে, যা দেশের ফুটবলের জন্য এক নতুন গৌরবের অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এমন অনন্য অর্জনকে সম্মান জানাতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) নারী ফুটবল দলকে বিশেষ সংবর্ধনা প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে যাতে দেশের অন্যতম সেরা দুই তারকা খেলোয়াড় আফঈদা ও ঋতুপর্ণা মিয়ানমার থেকে ব্যাংকক হয়ে রোববার (৬ জুলাই) দিবাগত রাত দেড়টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাদের অভ্যর্থনা জানানো হবে।
এরপর রাত আড়াইটার সময় রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র হাতিরঝিলের আম্ফিথিয়েটারে বিশাল সমাবেশের মাধ্যমে দলের সকল খেলোয়াড় এবং স্টাফদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এটি হবে এক গর্বিত ও আবেগঘন অনুষ্ঠান, যেখানে দেশের ফুটবলপ্রেমীরা দলকে সম্মান জানাবে এবং তাদের এই অসাধারণ সাফল্যের জন্য অভিনন্দন জানাবে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি আয়োজনের পেছনে রয়েছে একটি বিশেষ উদ্দেশ্য। কারণ, দলীয় দুই প্রতিভাবান তারকা ঋতুপর্ণা ও মনিকা চাকমা সোমবার (৭ জুলাই) সকালে ভুটানের লিগে খেলার জন্য থিম্পুর উদ্দেশে রওনা দেবেন। তাই তাদের হাতে সময় কম থাকায় গভীর রাতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে, যাতে দ্রুত তাদের সম্মান জানানো যায় এবং তারা দেশের গৌরব নিয়ে নতুন লিগের জন্য যাত্রা শুরু করতে পারে। জানা গেছে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় যেমন গোলকিপার রুপনা চাকমা, মারিয়া মান্দা এবং শামসুন্নাহার সিনিয়র দল ভুটানে যোগ দেবেন। এজন্যও তাড়াহুড়ো করে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে যাতে প্রধান দুই তারকাকে দেশবাসী শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পান।
রাজধানীর হাতিরঝিল আম্ফিথিয়েটারে এই বড় ধরনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেশের ফুটবল বোর্ডের শীর্ষ নেতৃত্ব, খেলোয়াড়দের পরিবার ও বিশাল সংখ্যক ফুটবলপ্রেমী অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এই আয়োজন বাংলাদেশের নারী ফুটবলের বিকাশে নতুন দিগন্তের সূচনা হিসেবে গণ্য হবে এবং দেশের যুবকদের কাছে ফুটবলকে আরও আকর্ষণীয় ও গৌরবময় খেলায় পরিণত করবে। সব মিলিয়ে, বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল শুধু একটি প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়নি, বরং দেশের ক্রীড়া ইতিহাসে একটি স্মরণীয় অধ্যায় যোগ করেছে। বাফুফের এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান তাদের সাফল্যের প্রতি সম্মান জানানো এবং দেশের তরুণ খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।