বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা রণবীর কাপুর এবার রামের চরিত্রে অভিনয় করছেন, যা নিয়ে বর্তমানে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সামাজিক মাধ্যমে এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই নেটিজেনরা তাকে নিয়ে নানা রকম কটাক্ষের মুখে পড়েছেন। বিশেষত রণবীরের গরুর মাংস খাওয়ার বিষয়টি সামনে আসার পর থেকে তাকে রাম চরিত্রে মেনে নিতে নারাজ অনেকেই। একদল দর্শক মনে করছেন, যিনি গরুর মাংস খান, তিনি কীভাবে রামের মতো পবিত্র ও আদর্শ চরিত্রে অভিনয় করতে পারেন? এ নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম, টুইট ও ফেসবুকে বিভিন্ন রকম মন্তব্য ও ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট এসেছে। তবে এই সব সমালোচনার মাঝে একান্তভাবে রণবীরের পাশে দাঁড়িয়েছেন জনপ্রিয় গায়িকা চিন্ময়ী শ্রীপদা। তিনি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করেন, আজকের সময়ে কারা কী খাচ্ছেন সেটা নিয়েই যেন সবচেয়ে বেশি আলোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়, যা স্বাভাবিক নয়। চিন্ময়ী লেখেন, ‘কে কী খাচ্ছে সেটাই এখন বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের উচিত মানুষকে ব্যক্তিগত জীবন ও পছন্দের জন্য দণ্ডিত করা নয়।’
রণবীর নিজেও একাধিকবার গরুর মাংস খাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। ২০১১ সালের এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, তার পরিবার পেশোয়ার থেকে আগত। পেশোয়ার অঞ্চলে পেশোয়ারি খাবারের মধ্যে গরুর মাংস, পাঁঠার মাংস এবং পায়া খুবই জনপ্রিয়। তাই নিজেও গরুর মাংস খেতে পছন্দ করেন। তিনি বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি গরুর মাংস খেতে ভালোবাসি।’ এরপর থেকে নানা সময় সামাজিক মাধ্যমে এই বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে রণবীর জানান, রামের চরিত্রে অভিনয় শুরুর আগে তিনি নিরামিষ আহার করছিলেন, যাতে চরিত্রের সাথে মানিয়ে যেতে পারেন। তবুও নেটিজেনদের সমালোচনা থামেনি, বরং বাড়তে থাকে। এমনকি সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্টে রণবীর ও অভিনেত্রী সাই পল্লবীর ছবি শেয়ার করে লেখা হয়, ‘গরুর মাংস খাদক ভগবান রামের চরিত্রে অভিনয় করছে, বলিউডের কি অবস্থা।’ এই ধরনের পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক ছড়িয়ে পড়ে। চিন্ময়ী শ্রীপদা সেই পোস্ট নিজের এক্স হ্যান্ডলে শেয়ার করে লিখেছেন, ‘ঈশ্বরের নাম করে কোনো বাবাজি ধর্ষক হতে পারে,’ অর্থাৎ মানুষের পছন্দ ও বিশ্বাসকে সম্মান জানানো উচিত। এই নতুন ছবিতে রণবীর কাপুরের বিপরীতে সীতার চরিত্রে অভিনয় করছেন সাই পল্লবী। এছাড়া লক্ষ্মণের ভূমিকায় রয়েছেন রবি দুবে এবং রাবণের চরিত্রে অভিনয় করছেন যশ। এই ছবিটি ভারতীয় সংস্কৃতির অন্যতম বড় প্রতীক রামায়ণের আধুনিক আঙ্গিকে নির্মিত। তবে এর আগে থেকেই রণবীরের এই চরিত্রায়ন নিয়ে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিতর্ক জোরদার হয়েছে।
এদিকে, অনেকেই মনে করছেন, একজন অভিনেতার ব্যক্তিগত পছন্দকে তার অভিনয়ের মাধ্যমে বিচার করা ঠিক নয়। কারণ অভিনয় একটি পেশা, যেখানে শিল্পী বিভিন্ন চরিত্রের মাধ্যমে নানা গল্প উপস্থাপন করেন। তাই রণবীরের গরুর মাংস খাওয়া বা অন্য ব্যক্তিগত বিষয়ে তার অভিনয়ক্ষমতার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক থাকা উচিত নয়। সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে, রণবীর কাপুরের রামের চরিত্রায়নে সামাজিক প্রতিক্রিয়া মিশ্র। একদিকে সমর্থকরা তার অভিনয় দক্ষতা ও অভিনয়কে নিয়ে ইতিবাচক, অন্যদিকে কিছু মানুষ তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সমালোচনা করছেন। তবে গায়ক চিন্ময়ী শ্রীপদার মত বেশ কয়েকজন তার পাশে দাঁড়িয়ে এই বিতর্কের মধ্যে মানবিকতা ও শ্রদ্ধার কথা বলছেন। ফলে এই বিষয়টি শুধুমাত্র একটি চলচ্চিত্রের চরিত্র নয়, বরং এটি সমাজে ব্যক্তি স্বাধীনতা, ধর্মীয় অনুভূতি ও সাংস্কৃতিক গ্রহণযোগ্যতার মধ্যে বিরাট দ্বন্দ্বেরও পরিচায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।