বাবা-মায়ের একমাত্র অবলম্বন ছিলেন হাছান হোসেন। পরিবারের আর্থিক টানাপোড়েন মেটাতে মাত্র ১৮ বছর বয়সেই ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি। সেখানে এক আত্মীয়ের লাইব্রেরিতে কাজ শুরু করেন। ঠিক সেই সময় দেশে শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, যাতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন হাছান। ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই রাজধানীর বাড্ডায় আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পরদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সেই থেকে সন্তানের শোকে ভেঙে পড়া বাবা-মায়ের দিন কাটছে অশ্রুভেজা বেদনায়। চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার তুলাতলি গ্রামের কবির হোসেন ও হালিমা বেগমের একমাত্র সন্তান ছিলেন হাছান। তিনি রহিমানগর শেখ মুজিবুর রহমান ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। হাছানের বাবা-মা বলেন, ‘ছেলে ছিল আমাদের ভরসা, আমাদের স্বপ্ন। বয়স কম হলেও সে পরিবারের দায়িত্ব নিতে শুরু করেছিল। ওকে হারিয়ে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি।’
মা হালিমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘এভাবে সন্তানকে হারাতে হবে কখনো ভাবিনি। কত মাস পার হয়ে গেল, আর কখনো ডাকবে না “মা” বলে, জড়িয়ে ধরবে না বুকে। ওর ধোয়া জামাকাপড় হাতে তুলে নিতে পারি না এখনো। সবাই ঘরে ফিরলেও আমার হাছান ফিরল না। রাতে লেখার টেবিলের দিকে তাকিয়ে থাকি, চোখে পড়ে না ছেলের মুখ।’ বাড্ডায় পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়া কলেজছাত্র হাছানের পরিবার কিছুটা সহায়তা পেয়েছে জুলাই বিপ্লব সংগঠন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য। এখন তাদের একটাই প্রত্যাশা-ছেলেকে হারানোর পর যেন সরকার অন্তত তাদের পাশে দাঁড়ায়।