আদালতের একাধিক গ্রেফতারি পরোয়ানা, হাইকোর্টে আবেদন খারিজ এবং নথিপত্রে প্রমাণিত অভিযোগ সত্ত্বেও বছরের পর বছর ধরে একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি পরিচয় পাল্টে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তার প্রকৃত নাম মো. মাসুম বিল্লাহ, তবে বর্তমানে তিনি ‘সাইমুন রেজা পিয়াস’ নামে যশোর শহরে বসবাস করছেন। স্থানীয়ভাবে নতুন পরিচয়ে ব্যবসা পরিচালনা করলেও তার বিরুদ্ধে রয়েছে প্রতারণা, বিশ্বাসভঙ্গসহ একাধিক গুরুতর অভিযোগ। মাসুম বিল্লাহর স্থায়ী ঠিকানা মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার পশ্চিম মিনাজদী গ্রামে। ২০২৩ সালের ২০ জুন ঢাকার সিএমএম আদালতে দায়ের করা একটি প্রতারণা মামলায় (সিআর কেস নম্বর: ৩২৬৭/১৫) তার বিরুদ্ধে প্রথম গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। সেই মামলায় আদালতের স্বারক নম্বর ছিল ৪২৪৭। মামলাটি বাদীর অনুপস্থিতিতে নয়, যথাযথ তদন্তের ভিত্তিতে প্রমাণসহ দায়ের করা হয়েছিল। পরবর্তীতে তিনি হাইকোর্টে আবেদন করেও ব্যর্থ হন, কারণ তার আবেদন ‘Dismissed for Default’ হিসেবে খারিজ হয়। সর্বশেষ ২০২৫ সালের ২০ জুন আবারও নতুন করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।
বর্তমানে ‘সাইমুন রেজা পিয়াস’ নামে তিনি যশোর শহরের আম্বিকা বসু লেন এলাকার আনিশা ভিলায় অবস্থান করছেন। ঠিকানায় দেখা গেছে, তার পিতার নাম লেখা রয়েছে ‘খন্দকার আবু উবাউদা’। তিনি মোবাইল নম্বর ০১৭১১-১৪৫১৩০ ব্যবহার করছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাসুম বিল্লাহ একাধিকবার ভিন্ন ঠিকানা ব্যবহার করে একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র (NID), ট্রেড লাইসেন্স, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও পাসপোর্ট তৈরি করেছেন। এসব নথি তৈরিতে সরাসরি জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া না গেলেও প্রতারণার উদ্দেশ্যে পরিচয় গোপন ও পরিবর্তনের কৌশল স্পষ্ট। ভুক্তভোগীদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, প্রতারণার শিকার হওয়ার পরও তারা এখনো কোনো প্রতিকার পাননি। একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জানান, “সে বারবার নাম-ঠিকানা পাল্টে প্রতারণা করে যাচ্ছে, অথচ প্রশাসন এখনো নিশ্চুপ।” আরেকজন ব্যবসায়ী বলেন, “দুইবার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, হাইকোর্টেও হেরেছে, কিন্তু এখনও গ্রেপ্তার হয়নি—এটা কিসের ইঙ্গিত?” এই বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি থানার ভূমিকা নিয়েও জনমনে ক্ষোভ বিরাজ করছে। অভিযোগ রয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রকাশ্যে ব্যবসা করলেও পুলিশ কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এতে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ও আইনের শাসনের ওপর আস্থা দুর্বল হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আইনের চোখে পরিচয় পাল্টে কেউ অপরাধী থেকে মুক্ত হতে পারে না। মাসুম বিল্লাহ ওরফে সাইমুন রেজা পিয়াসের বিরুদ্ধে যে ধরনের অভিযোগ উঠেছে, তা শুধু একজন ব্যক্তির নয়-বরং গোটা প্রশাসনের জন্য একটি বার্তা ও চ্যালেঞ্জ। জনগণ চাইছে, অবিলম্বে তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক এবং ভবিষ্যতে কেউ যেন পরিচয় বদলে অপরাধ আড়াল করতে না পারে, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হোক।
লিংকঃ https://drive.google.com/file/d/1DUBLfXJhILvk8jXy2BapVDScyrHObOJ2/view?usp=sharing